রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে। বাপ্পি আর স্থির থাকতে পারছে না।কারণ সবাই ঘুমিয়ে পরলেই তাদের কাজ শুরু করতে হয়।কেন না সে আর তার গুরু দুজনেই মাঝ রাতের কারবারি।অন্য লোকের সম্পদ থেকে লুকিয়ে কিছু নিয়ে এসে তা আবার রাতের মধ্যেই বিক্রি করে দেয় তারা । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা টাকা আর মোবাইল চুরিকে ই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে তবে স্বর্ণালঙ্কার ও তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। সুতরাং রাত বারোটা বাজলেই বাপ্পি আর স্থির থাকতে পারে না।
অতএব বাপ্পি তার ওস্তাদ নয়নকে মোবাইলে কল করে জিগ্যেস করল,ওস্তাদ কই তুমি,অহন ও তোমার কল পাইলাম না।আমার হাত পা তো কেমন কেমন করছে ,আর তো বইসা থাকতে পারছি না।
বাপ্পির ওস্তাদ নয়ন তাকে বলল, আরে ছোড়া একটু অপেক্ষা কর আমি তোর বাড়ির কাছে চইলা আইছি তাই আর কল করি নাই।আইজ যেইখানে যামু সেইটা তোর বাড়ি হইয়াই যাইতে হইব, তুই আর একটু বস।আমি চইলা আইছি প্রায়।
বাপ্পি তার ওস্তাদের কথা শুনে তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। আধা ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে দেখে সে আবার তার ওস্তাদকে মোবাইলে কল করল। কিন্তু তার ওস্তাদ নয়ন কল কেটে দিল। একটু পরই দরজায় কে যেন টোকা দিল।
বাপ্পি বুঝতে পারল তার ওস্তাদ ই হবে।দ্রুত দরজা খুলে দিল সে।
নয়ন ঘরে ঢুকে তার সহকারি বাপ্পিকে বকা দিয়ে বলল,ঐ ছোড়া এত উতলা হইছস কেন?
না রাত তো একটা বেজে গেল প্রায়।বাপ্পি আস্তে করে বলল।
হ বাজুক তাতে কি হইছে।শোন অত উতলা হইস না। আইজ যেইখানে যামু ঠিকভাবে দাও মারতে পারলে ছয় মাস কই কি হয়ত দু এক বছরে আর কিছু না করলেও হবে তয় রিস্ক আছে,খুব সাবধানে কাজ করতে হইবে বুজছস।নয়ন বলল।
বুঝলাম,তয় কই যাবা কইলা না তো? বাপ্পি জানতে চাইল।
চল আগে বের হই যাইতে যাইতে তোরে সব কমু।
বাপ্পি আর তার ওস্তাদ চুরি করার উদ্দেশ্য নিযে ঘর থেকে বের হয়ে পরল।নয়ন বহু বছর আগে থেকে চুরি করে আসছে, কয়েক বছর হয় সে বাপ্পিকে তার দলে নিয়ে নিয়েছে,বাপ্পিকে সে খুব পছন্দ করে ।কারণ বাপ্পি খুব চতুর ছেলে আর তার ভাষা বাপ্পি খুব সহজেই বুঝে ফেলে।
কিছুদূর হেঁটে নয়ন বাপ্পিকে নিয়ে একটা গলির মাঝখানে ঢুকে পড়ল। এবার হাঁটতে হাঁটতে নয়ন বাপ্পিকে উদ্দেশ্য করে বলল,শোন বাপ্পি আমরা আজকে যার বাসায় যাচ্ছি সে হল দেশের প্রভাবশালি একজন মন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছের লোক। বুঝতেই পারছিস কি কৌশল আমাদের করতে হবে। আমি আগেই সবকিছু দেখে আসছি। তাই কৌশলের ধারণা আমার মাথার মধ্যেই আছে। শোন ঐ বাসার চারিদিকে কিন্তু পাহারাদার রয়েছে তাই দেইখা আবার তুই ভয় পাস না। আমি যেভাবে যামু তুই খালি সেইভাবে আমার পিছে পিছে যাবি পারবি তো?
কি যে কও ওস্তাদ,তুমি কোনো চিন্তা কইরও না।আমি অতো বোকা চোর না যে মন্ত্রীর বাসায় চুরি করতে গিয়া বোকামি করমু,আমি তোমার হুকুম মতো সব কিছু করমু। বাপ্পি বলে উঠল।
এইত ঠিক আছে । চল তবে, আমরা কিন্তু কাছাকাছি চইলা আসছি। শোন আমার পিছনে আসবি ঐ যে বিশাল আলিশান বাড়িটা দেখতে পারছিসওখানেই আইজকা আমাদের মিশন। ঐ বাড়ির পিছনের গেটে এক পাহারাদার থাকে সে রাত দেড়টা বাজলেই পান বিড়ি খেতে গেট ছেড়ে ঐ দূরের এক দোকানে যায় আর সে দোকানে এক অল্প বয়েসি মেয়ে থাকে তার সাথে নানান কথাবার্তা বলে সময় কাটায়। আর এই সুযোগে তুই আর আমি আমাদের কাজ সারমু বুঝছিস। নয়ন বলল।
বাপ্পি নয়নের কথা শুনে বলল,জ্বি ওস্তাদ,বুঝবার পারছি চলো দেড়টা তো বেজে গেল প্রায়।
নয়ন তার সাগরেদ কে সাথে করে মন্ত্রীর বাড়িতে চুরি করতে এসেছে এইভেবে যে সে দেশের ধনী মানুষ আর তার বাড়িতে চুরি করলে দুই এক বছর তারা বসে বসে খেতে পারবে। ভাবনাটা খুবই সুন্দর আর এতে যে চরম ঝুঁকি রয়েছে সেটাও তারা কমবেশি অনুধাবন করেছে।তবুও তারা পিছপা হয়নি কারণ তারা যে চোর মাঝ রাতের কারবারি।তারা তো রিস্ক আছে বলেই দমে যাবে না। সুতরাং সমস্ত ভয়ভীতি কে সঙ্গী করেই নয়ন তার সাগরেদ বাপ্পিকে নিয়ে মন্ত্রীর বাড়িতে চুরি করার অভিযানে নেমে পরেছে।
প্ল্যান অনুযায়ি দেড়টা বাজতেই নয়ন তার সাগরেদ কে নিয়ে মন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে পরল।
বাসার সবাই ঘুমের ঘোরে অচেতন হয়ে পরে আছে। সঠিক সময়েই তারা এসেছে। চোরদের জন্য এটাই সুসময়। নিরিবিলি পরিবেশে সবকিছু হাতিয়ে নেওয়ার উপযুক্ত সময়। নয়ন আর তার সাগরেদ সেই কাজ ই করতে লাগল।তবে তারা যা খুঁজছিল ঠিক সেরকম কিছু তাদের নজরে আসছিল না। তারা দুইটা রুমে ঘুরে এলো কিন্তু কোনো টাকা বা মোবাইল বা স্বর্ণের কোনো জিনিস পেল না। এবার তারা দোতলায় উঠে গেল।
মন্ত্রী সাহেব যে রুমে ঘুমাচ্ছে ঠিক সে রুমেই এবার নয়ন আর বাপ্পি প্রবেশ করল। বিশাল রুম ,চারিদিকে কয়েকটি আলমিরা রয়েছে। মাঝখানে বড় একটা খাটের ওপরে মন্ত্রী সাহেব তার স্ত্রীকে নিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।এইবার সঠিক যায়গায় তারা এসেছে নয়ন মনে মনে তাই ভাবল।সে তার সাগরেদ বাপ্পিকে ইঙ্গিত দিয়ে আলমিরা খোলার নির্দেশ দিল।
বাপ্পি ওস্তাদের নির্দেশ পেয়ে একটা আলমিরা বিশেষ চাবি দিয়ে খুলে ফেলল। আরেকটি আলমিরা খুলল নয়ন নিজে। নয়ন যদিও চোর তবুও সে কিছুদূর লেখাপড়া করেছিল। তাই তার কিছু বুঝ ব্যবস্থা ছিল। সে যে আলমিরা খুলল তার মধ্যে সব কাগজপত্রে ভরপুর। নয়ন তাদের বিশেষ লাইটের আলো জ্বেলে পড়ে দেখল সব ধরনের কাগজ বিভিন্ন সরকারি প্রজেক্টের। আর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দলিল । নয়ন আপনা থেকেই বুঝতে পারল এসব কিছুই অবৈধ সম্পত্তি র দলিল হবে হয়ত। আর বিভিন্ন প্রজেক্টের নাম দেখিয়ে টাকা মেরে খাওয়া বিষয়ের কাগজপত্র এগুলো। সব কিছুর প্রমাণ নিজের কাছে আটকে রেখেছে মন্ত্রী সাহেব। নয়ন মনে মনে বলল আমরা তো মধ্য রাতের কারবারি কিন্তু মন্ত্রী সাহেবকে মনে হচ্ছে সে সারা দিনের ই অবৈধ সম্পদের কারবারি। আমরা সাধারণ চোর তাই সবার কাছে অপরাধি আর আমাদের মন্ত্রী সাহেবেরা অসাধারণ চোর তাই তাদের কোনো অপরাধ নেই। তারা দিব্যি সমাজের বুকে সসন্মানে উঁচুস্বরে জীবন ধারণ করে থাকে।
অপর দিকে বাপ্পি যে আলমিরা খুলল তাতে টাকার কোনো কমতি ছিল না। বাপ্পি আলমিরা খুলে টাকা দেখে বেহুস হবার অবস্থা হলো তার।সে জীবনে কোনো দিন এত টাকা দেখেনি।তার মাথা ঘুরে গেল কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। মানুষের এত টাকা থাকতে পারে সে কোনোদিন তা ভাবতেও পারেনি। কি করবে ইঙ্গিতে তার ওস্তাদের কাছে জানতে চাইল।
তার কাছে এসে ফিসফিস করে নয়ন তাকে বলল,এ সবই অবৈধ টাকা তাই যা পার দ্রুত তাই ব্যাগে ভরতে থাক। বেশিক্ষণ আমরা এখানে কিন্তু থাকতে পারব না।
বাপ্পি ওস্তাদের হুকুম পেয়ে টাকা ব্যাগে ভরতে লাগল। আর নয়ন ততক্ষণে আর একটি আলমিরা খুলল। যদি অন্য কোনো সম্পদ পাওয়া যায় এই আশায়। নয়নের সন্দেহই ঠিক হলো। সে তার চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। আলমিরা ভর্তি বিভিন্ন ধরনের স্বর্ণের অলঙ্কার।এবার নয়ন একসাথে এত স্বর্ণ দেখে নিজেকেই ঠিক রাখতে পারছে না। তার মাথাও ঘুরে যাওয়ার অবস্থা হলো।
এবার তারা দুইজনে দুইটি ব্যাগে টাকা আর স্বর্ণালঙ্কার ইচ্ছে মতো ভরতে লাগল।তারা যা খুঁজছিল তা পেয়ে গেছে সুতরাং তারা আর অন্য কোনো আলমিরা খুলতে উদ্যত হলো না। এখান থেকে মন মতো টাকা আর স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে কেটে পরতে পারলেই হয়।তাহলে তাদের কে আর জীবনে কিছু করতে হবে না। ইঙ্গিতে দ্রুত কাজ সারার জন্য নয়ন তার সাগরেদ বাপ্পিকে তাগাদা দিল।
বাপ্পি ওস্তাদের ইশারা পেয়ে তার হাত আরো দ্রুত চালাতে লাগল।রাতের কাজ তাই বেশি দ্রুত করা কষ্টকর।তবুও তাদের সবসময় সব ধরনের কাজ দ্রুত করে যেতে হয়।কেননা চুরির কাজ আস্তে আস্তে করা মানেই ধরা পরার সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলা।
কিছুক্ষণ কাজ করার পরই নয়ন আবার ইশারা করল তার সাগরেদ বাপ্পিকে।এবার তার ইশারার মানে হচ্ছে কাজ বন্ধ করে দাও অনেক হয়েছে সুতরাং কেটে পরতে হবে।দুইজনে ব্যাগ বন্ধ করে এবার কেটে পরার জন্য তৈরি হলো। কিন্তু সহসা রুমের লাইট জ্বলে উঠল।
ভয়ে কেঁপে উঠল বাপ্পি।এতগুলো টাকা পেয়েও কি তবে হাতছাড়া হবে শেষে।নয়ন অবশ্য অভিজ্ঞ সে বেশি বিব্রত হলো না।সে লক্ষ্য করল যে বিষয়টা কি সে তাকিয়ে দেখল মন্ত্রী সাহেব রুমের লাইট জ্বেলে দিয়েছে,মানে সে টের পেয়ে গেছে।নয়ন আস্তে করে বাপ্পি কে বলল,এই মুখোশটা আরো ভালো করে পরে নে।
এবার দুইজনে শক্ত করে মুখোশ পরে নিল যেন তাদের কেউ চিনতে না পারে। মন্ত্রী সাহেব লাইট জ্বেলে এবার চিৎকার দিতে লাগল, ওরে কে আছিস ঘরে চোর ঢুকেছে। ঘুম চোখে তাই চিৎকার বেশি জোরালো হলো না। আর একবারের বেশি তাকে চিৎকার করার সুযোগ দিল না নয়ন। সে পকেট থেকে ছুড়ি বের করে মন্ত্রীর গলায় ধরে গালে জোড়সে এক চড় লাগিয়ে দিয়ে বলল,শালা মন্ত্রীর বাচ্চা একটা চিৎকার করবি না তাহলে গলা থেকে মাথা আলাদা করে দেব।
নয়নের কথায় মন্ত্রী চুপ হয়ে গেল।সে আর কোনো কথা বলল না। নয়ন আবার রুমের লাইট অফ করে দিল। চিৎকার করতে না পারার জন্য মন্ত্রী সাহেবের স্ত্রী ও টের পেল না।এবার মন্ত্রী সাহেবের গালে আবারো জোড়সে আরেক টা চড় লাগিয়ে দিল নয়ন। আর বলল,শালা চোরের বাচ্চা চোর তুই আমাগো কি চোর বলিস তোর মতো বড় চোর আর দেশের বুকেই তো নাই। তোর সব লুকিয়ে রাখা কাগজ আমরা দেখছি। এত টাকা আর এত সোনাদানা তুই কই পাইছিস অবশ্যই এসব অবৈধ উপায়ে তুই নিজের দখলে এনেছিস। তাই কোনো শব্দ করবি না। তোর গলা কেটে মাথা আলাদা করে দেব।
নয়নের কথা শুনে এবার মন্ত্রী নরম হয়ে গেল।সে আস্তে করে বলল,তোমরা সব দেখে ফেলেছ আচ্ছা আমি কিছু বলব না,তোমরা যা নিয়েছ তা নিয়ে ই কেটে পরো তবে এসব কথা কাউকে বলতে যেও না যেন।
সে বড় চোর ওস্তাদ তাকে বিশ্বাস করবা না। এইভাবে বইলা সে আমাগো ধরাইয়া দিতে পারে।তাই সাবধান এই চোর মন্ত্রীটারে আমাদের সাথে লইয়া চল।দুই চার ছুড়ির কোপ দিয়া রাস্তায় ফালাইয়া দিমু।তাইলেই শালায় ঠিক হইব।আর চুরি করব না। বাপ্পি তার ওস্তাদকে সাবধান করে বলে উঠল।
বাপ্পির কথা শুনে নয়ন বলল, তুই ঠিকই কইছস। এতো সহজে এরে এইখানে রাইখা গেলে আমরা গেট পার হইতে পারমু না তার আগেই পাহারাদার রা আমাগো ধইরা ফালাইবো। চল শালা চোর তুই তো আমাগো চাইতে বড় চোর আমরা চুরি করি পেটের দায়ে আর তুই দেশের মানুষের সম্পদ এইভাবে চুরি কইরা আলমিরার মধ্যে সব আটকাইয়া রাখছস।চল আমাগো সাথে চল,আমাগো বাড়ির বাইরে বের কইরা দিবি আর রাস্তায় নিয়া তোর পেটে ছুড়ির দুইটা কোপ দিয়া ছাইড়া দিমু।
নয়নের কথা শুনে মন্ত্রী কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।সে বলল,এমন কাজ কইর না।আমি ছাড়া পাইলে তোমাদের ধরতে পারলে দুইজনরেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেব।
মন্ত্রী র কথা শুনে রেগে গেল বাপ্পি সে আবছা আলোতেই আবারো মন্ত্রীর গালে কসে চড় লাগিয়ে দিলো তার ওস্তাদের মতোই।আর বলল, শালা চোর তুই আমাগো কি ফাঁসির ভয় দেখাস বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর সব কিছু আমরা দেশের মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেব, কি কও ওস্তাদ। তহন বুঝবি ফাঁসি কারে কয়। জনগন তোরে পাড়াইয়া মাইরা ফালাইবে।
বাপ্পির সাহস দেখে নয়ন আরো সাহসী হয়ে উঠল। সে বলল, হ তুই ঠিকই কইছস, এই চোর শালারে মানুষের সামনে ধরাইয়া দেয়া উচিত। কারণ আমরা তো পেটের দায়ে মাঝরাতে লুকিয়ে কোনেমতে সামান্য কিছু চুরি করে পালাইয়া যাই আর এই শালারা দিনে দুপুরে যখন তখন নিজেদের আয়েশ মিটাবার জন্য সবকিছু লুটেপুটে নেয়।আমাদের মতো এরাও চোর তবে দেশের বুকে এদের কোনো দোষ নাই এরা সন্মানিত কারণ কেউ এদের সম্পদের কোনো খোঁজ রাখে না। মানুষের প্রাপ্য সম্পদ হরণ করে এরা আয়েশে জীবন কাটায়। চল এইটাকে আজ ধরিয়ে দেই।
চোরদের কথা শুনে মন্ত্রী সাহেব এবার ভড়কে গেল। সে ভাবল হায়রে এবার বুঝি আমার মান ইজ্জত আর এতদিনে গড়ে তোলা এই বৈধ অবৈধ সম্পদ সবকিছুই চলে গেল।কি করবে মন্ত্রী সাহেব নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না।
অবস্থা বেগতিক দেখে মন্ত্রী সাহেব বলল, না না তোমরা এমন করো না,দেখ আমার একটা ইজ্জত আছে।আমি চাইলে তোমাদের আরো সম্পদ দিতে পারবো।আজই আরো টাকা নিয়ে যাও তবুও আমার এই সব গোপন সম্পদের কথা প্রকাশ করে দিও না।
নয়ন ভাবল বেশি কথা বাড়ালে তারাই বিপদে পরে যাবে।তাই সে এবার বলল,আর টাকায় কাজ নাই চলো আমাগোর সাথে, বাইরে গিয়া মন্ত্রী সাহেব তোমারে ছাইড়া দিমু।
এদিকে অন্য ঘটনা ঘটে গেছে কেউ তা টের পায় নি। এত কথাবার্তার মাঝে কেউ কি ঘুমাতে পারে। মন্ত্রী সাহেবের বউ ও পারল না। সকলের অজান্তেই মন্ত্রী সাহেবের স্ত্রী সজাগ হয়ে চুপিচুপি মোবাইলে পাহারাদার দের কাছে মেসেজ পাঠিয়ে দিয়েছে যে তাদের রুমে চোর এসেছে আর তার স্বামীকে আটকে মারধোর করছে। এ বিষয়টা কেউই টের পায় নি। এই কাজ করে সে চুপচাপ শুয়ে রইল।
নয়ন তার কথা শেষ করে যেই মন্ত্রী সাহেবকে নিয়ে বাইরে বের হতে উদ্যত হলো ঠিক তখনই পাহারাদার লোকজন দলে দলে এসে নয়ন আর বাপ্পিকে ঘিরে ধরল। সকলেই অস্ত্র তাক করে রাখল তাদের দিকে। সুতরাং পালাবার কোনো সুযোগ ই তারা পেল না।
আর তখনই মন্ত্রী সাহেবের স্ত্রী উঠে রুমের আলো জ্বেলে দিয়ে বলল, ছেড়ে দে আমার স্বামীকে।শয়তানের দল এতক্ষণ ধরে আমার স্বামীকে মারধোর করছিস। এই সিকিউরিটি এই দুটোকে ধরে নিয়ে আচ্ছামতো মারধোর করেন।
নয়ন আর বাপ্পি হতবাক হয়ে গেল। তারা কিছুই বুঝে উঠতে পারল না। কোথা থেকে এই লোকগুলো এসে হাজির হল,এবার তো তাদের আর রক্ষা নাই।চোর ধরেছে বলে তো তাদের কে শেষ করে দেবে এই পুকুর চোরের দল।তাদের কথা তো আর কেউ শুনবে না।হায় কি হবে। নয়ন নিজেদের কে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিল।
এবার মন্ত্রী সাহেব ছাড়া পেয়ে পুরাই পাল্টে গেল।একটু আগে যে ইজ্জতের ভয়ে চোরদের কে আরো সম্পদ দিতে চেয়েছিল সে ই নিজের বোল পাল্টে বলল, এই তোমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছো যে ,আগে শয়তান দুটোর হাত থেকে ব্যাগ দুটো নিয়ে আমার খাটের নিচে লুকিয়ে রাখো কেউ এত টাকার খোঁজ পেয়ে গেলে আমার সমস্যা হয়ে যাবে। এই বলে সে কষে নয়ন আর বাপ্পিকে চড় থাপ্পড় লাগাতে লাগল।তার দেখাদেখি পাহারাদার সবাই মিলে চোরদেরকে উত্তম মধ্যম দিতে লাগল।
এত বেশি মারধোর চুরি জীবনে কোনোদিন নয়ন আর বাপ্পি খায় নি। তারা বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারল না।নিজেদের অজান্তেই তারা দুজনে অজ্ঞান হয়ে পরে রইল।
সকালে যখন নয়ন আর বাপ্পির জ্ঞান ফিরল তখন তারা দেখল তারা দুজনে হাত পা বাধা অবস্থায় বাড়ির সামনে পরে আছে। আর বিভিন্ন মিডিয়ার লোক এসে ভরে গেছে।তারা কেউ কেউ লাইফে দেখাচ্ছে যে মন্ত্রীর বাড়িতে চুরি করতে আসা ভয়াভয় দুই চোর কে হাতেনাতে ধরে ফেলেছে প্রহরীরা।সবাই অপেক্ষা করছে মন্ত্রী সাহেবের কথা শোনার জন্য।সে উপর থেকে নামবে তার জন্য মিডিয়ার সবাই অপেক্ষা করছে।
কিছুক্ষণ পরে মন্ত্রী সাহেব নিচে নেমে এলো।সে এসে তার কথা শুরু করল।তার কথা শোনার জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পরল।সে তার জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখল।আর নিকৃষ্ট চোর দুটিকে কারাগারের সর্বনিকৃষ্ট স্থানে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দিয়ে দিল।
মন্ত্রীর বাড়িতে চুরি করতে আসা আবার তাকে চড় মারা এর কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে এই শয়তান দুটোকে। একটু হলেই এই চোর দুটো আমার সব কিছু শেষ করে দিত যদি ওরা বাইরে যেতে পারত। মন্ত্রী মনে মনে ভাবল।
পুলিশ এসে মন্ত্রীর নির্দেশে চোর নয়ন আর বাপ্পির মুখে টেপ মেরে দিল। তাদের কথা বলা সম্পূর্ণ নিষেধ।অবশ্য তাদের কথা কেউ শুনতেও চায় না।তাদেরকে আটকানোর কাহিনী ই সবাই শুনতে চায়।আর সবাই সেই কাহিনী ই শুনল।কেউ চোরদের মুখে সত্য কোনো কাহিনী শুনতে আগ্রহী নয়।আর পুলিশ সে ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছে যেন তারা কিছু বলতে না পারে।
মিডিয়ার সাথে কথা বলা শেষ করে মন্ত্রী সাহেব সবকিছু ক্লোজ করার নির্দেশ দিয়ে দিল। আর সে নিজের গাড়িতে গিয়ে বসল।সেও পুলিশের সাথে থানায় গিয়ে চোর দুটোর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে আসবে পুলিশকে এমনটাই জানিয়ে দিল।
পুলিশ নির্দেশ মতো কাজ শুরু করে দিল।তারা চোর দুটো কে গ্রেফতার করে তাদের গাড়িতে নিয়ে বসাল থানায় নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
নয়ন আর বাপ্পি নিশ্চুপে সবকিছু দেখে যাচ্ছে।কারণ এই বড় মানুষদের সমাজে তাদের মতো চোর ছোট লোকদের কিছু বলার তো কোনো অধিকার নেই। সুতরাং পুলিশের দুটো লাথি খেয়ে অসহায়ের মতো তারা গাড়িতে বসে রইল।
পুলিশের গাড়ি থানার উদ্দেশ্যে ছুটে চলছে। নয়নের কিছু আর বলা হলো না । সে শুধু ভাবল, সে তো চোর, চোরের কিছু করার তো শক্তি নেই ।তাকে শুধু শাস্তি পেতে হবে।আর মন্ত্রীর মতো এত বড় ক্ষমতাবান লোকের বিরুদ্ধে তাদের মতো চোরেরা কিছু বলে কিছুই করতে পারবে না। আর তাদের কথা কেউ কোনোদিন বিশ্বাস ও করবে না। কেউ তাদের কখনো সাপোর্ট ও করবে না। সুতরাং তারা যে চোর এটাই সবচেয়ে বড় সত্যি কথা।অতএব তাদেরকেই শাস্তি পেতে হবে। আর সবাই তো দেখেছে তারা চুরি করতে এসে ধরা পরেছে। সুতরাং তারা মধ্য রাতের চোর। চুরি ই তাদের কারবার,তারা ও অপরাধি। তাদের শাস্তি হওয়াটা দোষের কিছু নয়।যদিও তাদের মতে মন্ত্রী সাহেব সারা দিনের কারবারি,সারা দিনের চোর।
কিন্তু তবুও কে বড় চোর আর কে ছোট চোর তা কেউ ই জানতে চায় না এই দেশে। সবাই শুধু নিজের সুখে নিজের কাজ করে যাচ্ছে। কোনো দিকে কারো কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। আর কেই বা শুনবে কার কথা । এই পৃথিবী তো বড় চোরদের দখলে চলে গেছে।
নয়নের নয়ন থেকে শুধু দুফোঁটা জল ঝরে পরল।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
মধ্য রাতে দুই চোরের জীবন কাহিনীর মাধ্যমে আমাদের সমাজের দায়িত্বশীলদের মাঝ রাতের আঁধারের মতো আঁধার জীবনের কাহিনী ফুটে উঠেছে এই গল্পের মাধ্যমে।সুতরাং গল্পটি বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
২২ জানুয়ারী - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
১১৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪